কার্যক্রমসমূহ
অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম
- ২০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি গ্রহণ করে অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা
- চিকিৎসাপত্র ও পরামর্শ দান;
- বিনামূল্যে সাধ্যমতো ওষুধ প্রদান;
- স্বল্পমূল্যে প্যাথলজী পরীক্ষা;
- সীমিত ব্যয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা;
- সপ্তাহে ছয় দিন প্যারামেডিক কতৃর্ক চিকিৎসা সেবা;
- সপ্তাহে তিন দিন প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা নারী—কিশোরীদের চিকিৎসা সেবা দান;
- অভ্যন্তরীন স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম ও প্রতি শনিবার পুষ্টিহীন শিশুদের পুষ্টিকর খাবার প্রদান কর্মসূচি;
চিকিৎসা সেবা, প্যাথলজি সেবা, ওষুধ প্রদান ও অভ্যন্তরীণ সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম
সেবাকেন্দ্রে আগত রোগিদের ফাউন্ডেশনের নিয়ম অনুযায়ী ক্রমানুসারে ধারাবাহিকভাবে সেবা দান করা হয়। রোগিরা প্রথমে এসেই রোগি রেজিষ্ট্রেশন কক্ষ থেকে ১৫ টাকার বিনিময়ে একটি টোকেন সংগ্রহ করে। তারপর তারা চলে যান প্রশিক্ষণ কক্ষে। প্রতি শনিবার প্রশিক্ষণ কক্ষে আগত রোগিসহ তাদের স্বজনদের গর্ভবতী মায়ের যত্ন, প্রসূতি মায়ের সেবা, প্রসব পরবতীর্ মায়ের যত্ন, নবযাতকের সেবা, শিশুর টিকা, কিশোর—কিশোরীর বয়ঃসন্ধিকাল, লক্ষণ ও করণীয়, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। সেখান থেকে তাদেরকে সিরিয়াল অনুযায়ী নিয়ে যাওয়া হয় ডাক্তার যেখানে বসেন সেখানে অর্থাৎ রোগি সেবাদান কক্ষে। ডাক্তার তাদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে চিকিৎসা পত্র প্রদান করেন। কারো যদি প্যাথলজি পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে তাহলে তাদেরকে পাঠিয়ে দেয়া হয় প্যাথলজি ল্যাবে। এখানে আল্ট্রাসনোগ্রামসহ স্বল্প পরিসরে উন্নতমানের আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত প্যাথলজি ল্যাবে রোগিদের প্যাথলজি সেবা দান করা হয়। উল্লেখ্য যে, প্যাথলজি পরীক্ষা আমাদের সেবা কেন্দ্রে নামমাত্র মূল্যে করা হয়ে থাকে যা’ অত্র অঞ্চলের সকলে অবগত আছেন। চিকিৎসা পত্র গ্রহণের পর রোগিরা চলে যান ওষুধ প্রদান কক্ষে যেখানে বিনামূল্যে সাধ্যমতো ওষুধ প্রদান করা হয়।
চিকিৎসা সেবা, প্যাথলজি সেবা, ওষুধ প্রদান ও অভ্যন্তরীণ সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম
ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন পরিচালিত মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে আশপাশের ত্রিশ থেকে চল্লিশ গ্রামের মানুষ অবগত এবং তারা সকলে এই সেবা কেন্দ্র নিয়ে গর্ব করেন। শুধুমাত্র এলাকার মানুষ নয় শিল্প প্রধান এ’ অঞ্চলের জীবিকার প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা স্বল্প আয়ের মানুষ, বিশেষ করে গার্মেন্টস কমীর্ ও অন্যান্য শিল্প কারখানার শ্রমিকদের চিকিৎসার একমাত্র আশ্রয়স্থল মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র। সেবা কেন্দ্রের সুনাম এখন এতটাই বিস্তৃত যে, গরীব ও দুস্থ মানুষের পাশাপাশি এখন প্রায়সই দামি গাড়ি হাঁকিয়ে সম্ভ্রান্ত মানুষজনও চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন এখান থেকে।

মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত কার্যক্রমসমূহ
- ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের ৭ জন গ্রামীণ স্বাস্থ্যকমীর্ প্রতি মাসে কর্মএলাকার ৫টি মডেল ভিলেজে ৩০০টি খানা পর্যায়ক্রমে পরিদর্শন করে ১৮০০টি পরিবারের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়াদি অবলোকন করছেন এবং খানাভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করছেন। জটিল রোগাক্রান্তদের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের নির্ধারিত এম.বি.বি.এস ডাক্তার/প্যারামেডিকের কাছে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করছেন। স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসকের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
- কর্ম এলাকায় স্যাটেলাইট স্বাস্থ্য সচেতনতা ও স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় গাজীপুর জেলাধীন দুইটি উপজেলা গাজীপুর সদর এবং শ্রীপুর উপজেলায় বর্তমানে চলমান। রক্ষিতপাড়া, নয়াপাড়া, জানাকুর, ফাউগান, জয়নারায়নপুর ও চাওবন গ্রামে পাক্ষিক সূচি নির্ধারণ করে সপ্তাহের বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুইজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, একজন স্বাস্থ্য প্রশিক্ষক, একজন প্যারামেডিক ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফার্মাসিষ্ট দ্বারা স্যাটেলাইট স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক সেশন এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আগত রোগিদের পুষ্টিহীনতা জনিত দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষাকরণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি রোগীকে ব্যাবস্থাপত্র অনুযায়ী যথা সম্ভব বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। যেটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার রোধ করে শূণ্যের কোটায় নিয়ে আসা। ২০১৮ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১৫৩টি স্যাটেলাইট ক্যাম্প পরিচালিত হয়। উক্ত ক্যাম্পের মাধ্যমে সর্বমোট ১৫,৭০১ জন রোগিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত কার্যক্রমসমূহ
- খানা পরিদর্শনের মাধ্যমে নারী, শিশু, কিশোরীদের মধ্যে ট্রমাটাইজ, মৃদু মানসিক রোগাক্রান্ত ভুক্তভোগীদের চিহ্নিত করে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য পর্যায়ক্রমে হেল্থ ক্যাম্প, কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপি প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
- স্বাভাবিক জীবনে ধরে রাখার জন্য এ’সব ভুক্তভোগী নারী—কিশোরীর পরিবার কেন্দ্রিক আত্ম—কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
- ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের জরিপকৃত তথ্য অনুসরণে এক্ষেত্রে ১০০০টি খানার অধিবাসীর পুষ্টি ঘাটতি—পূরণের জন্য প্রকল্পের আওতায় ছোট আকারে মডেল সবজি বাগান প্রতিষ্ঠাকল্পে ইতিমধ্যে ৪৪টি মডেল সবজি বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, প্রতিটি মডেল পুষ্টি বাগানের জন্য ফলদ, বনজ, ঔষধী গাছের চারা ও মৌসুমী শাক—সবজি সমন্বয়ে বাগান প্রস্তুত করা হয়েছে।
- প্রকল্প কার্যালয় অর্থাৎ সেবা কেন্দ্রের চত্ত্বরে মডেল সবজি বাগান ক্ষুদ্র পরিসরে প্রতিষ্ঠা করা করা হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত কার্যক্রমসমূহ
- মারাত্মক পর্যায়ে ট্রমাটাইজ হওয়া নারী—কিশোরীকে ধারাবাহিকভাবে সাইকোলজিষ্ট/সাইক্রিয়াটিক—এর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা সমাপন শেষে সরাসরি কর্মসংস্থান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
- কর্ম এলাকার মাদকাসক্ত, টিজার, বখে যাওয়া, বেকার যুবক—তরুণকে প্রয়োজনানুসারে ধারাবাহিকভাবে কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপি করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে আত্ম—কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
- মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে আবাসিক সেবা কার্যক্রম (Indoor Service) অতিসম্প্রতি চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি নারী—পুরুষ, কিশোর—কিশোরী, যুবক—যুবা ও তরুণ—তরুণীদের জন্য কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপি কেন্দ্র চালু করা হবে।
মাঠ পর্যায়ে ‘গ্রামীণ নারী স্বাস্থ্য—সচেতন গ্রুপ’ সচেতনতা কার্যক্রম
ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন ২০০০ সালে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু করার পর রোগি দেখার পাশাপাশি বনভূমি পরিবেষ্টিত প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম হিসাবে ‘হেলথ ক্যাম্প’ পরিচালনা করা হতো। এই ক্যাম্প পরিচালনা করতে গিয়ে দেখা যায় যে, অত্র অঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে খুবই অসচেতন। আধুনিকতার ছেঁায়া লাগেনি বরং মধ্যযুগীয় কায়দায় হাতুড়ে কবিরাজের উপর নির্ভরশীল তারা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য ছিল রোগ নির্নয়, রোগের সেবা ও রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। কারণ মানুষকে যদি রোগ সম্পর্কে সচেতন করা যায় তাহলে রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক কমে আসে। তাই সচেতন করে তোলাটাই ছিল মূল্য লক্ষ্য। পরবতীর্তে এই ধারার পরিবর্তন করে সেবা কেন্দ্রের আশপাশের ১৫টি গ্রাম নির্ধারণ করে স্বাস্থ্য সচেতন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা হয়। একজন সভাপতি, একজন সহ—সভাপতি ও একজন সদস্য সচিব নির্বাচন করে মোট ২১ জনের কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে আমাদের মাঠ কমীর্বৃন্দ সরাসরি সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। স্থানীয় জনগণ প্রথম দিকে বিষয়টি সচেতনভাবে গ্রহণ করতে না পারলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কার্যক্রমটি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে। কমিটিগুলোতে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে নারী স্বাস্থ্য সচেতন গ্রুপের সদস্য সংখ্যা—১২৫০ জন।
মাঠ পর্যায়ে ‘গ্রামীণ নারী স্বাস্থ্য—সচেতন গ্রুপ’ সচেতনতা কার্যক্রম
জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোতাবেক ২০১২ সালে সচেতনতা কার্যক্রম আরো ৫টি গ্রামে বাড়িয়ে ২০টি গ্রামে ৩৪টি কমিটিতে রূপান্তর করা হয়। ২০১৩ সালে কমিটির সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৪০টিতে। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি গিয়ে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০টিতে। বর্তমানে হালডোবা সংলগ্ন চতুর্দিকে বিশ মাইল জুড়ে ২৫টি গ্রামে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট ৫০টি নারী—স্বাস্থ্য সচেতন গ্রুপ পরিচালনা করা হচ্ছে। যার সরাসরি সদস্য সংখ্যা ১২৫০ জন। নারী—কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রত্যন্ত গ্রামে নিয়মিত মাসিক সচেতনতা সভা আয়োজন করা ছাড়াও প্রতি তিন মাস পর পর হালডোবা ‘মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে’ নারী—স্বাস্থ্য সচেতন গ্রুপ—প্রতিনিধি কর্মশালা আয়োজন করা হয়। প্রত্যন্ত গ্রামের নারী—স্বাস্থ্য সচেতন গ্রুপ প্রতিনিধিবৃন্দের এ’ কর্মশালায় গর্ভবতী মায়ের যত্ন, গর্ভকালীন টিকা, সুষম খাদ্য, নিরাপদ মাতৃত্ব, প্রসূতির যত্ন, নবজাতকের যত্ন, শিশুর টিকা, শিশুর বাড়তি খাবার, কিশোর—কিশোরীর বয়ঃসন্ধিকাল, পারিবারিক পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনায় সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। ফলশ্রম্নতি হিসাবে ঐ সব গ্রামে নারী—কিশোরী—শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী মাঠ কমীর্বৃন্দ প্রতি মাসে ২৫টি গ্রুপে স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সচেতনতা কার্যক্রমের পাশাপাশি সদস্যবৃন্দের মধ্যে সাধ্যমতো পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে কমিটির সদস্যবৃন্দ নিজেরা সচেতনতা বিষয়ক জ্ঞানার্জন করে তাদের প্রতিবেশি, আত্মীয়—স্বজনকেও সচেতন করে তুলেছেন। বর্তমানে এই সচেতনতা কার্যক্রম থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপকারভোগীর সংখ্যা ১০০০০ জনের অধিক।

মা ও শিশু পুষ্টি—ঘাটতি পূরণ কার্যক্রম
ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন এই অঞ্চলের আপামর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য সেবা দান ও স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর মাস পর্যন্ত অপুষ্টির শিকার শিশু—কিশোরী—নারীদের সংখ্যা নিরুপনে সেবা কেন্দ্রের আশপাশে ২০টি গ্রামে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের মাঠ পর্যায়ের কমীর্দের মাধ্যমে খানাভিত্তিক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। জরিপে অত্র অঞ্চলের শিশু ও গর্ভবতী নারীদের অপুষ্টির চিহ্ন ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল এক্সপোজার, হংকং লিমিটেডের সহায়তায় ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন অত্র অঞ্চলের ১ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণে সপ্তাহে এক দিন পুষ্টিকর খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রথম অবস্থায় সেবা কেন্দ্রের অভ্যন্তরে সপ্তাহে ১ দিন ২০ জন শিশুকে পুষ্টিকর খাবার হিসাবে ১টি সেদ্ধ ডিম, একটি আপেল ও পুষ্টিকর বিস্কুট প্রদান করা হতো।
মা ও শিশু পুষ্টি—ঘাটতি পূরণ কার্যক্রম
এখনো সেই কার্যক্রম চলমান আছে। যেহেতু প্রকল্পের শিরোনাম হচ্ছে ‘মা ও শিশু পুষ্টিঘাটতি পূরণ কার্যক্রম’ সে দিক বিবেচনা করে ২০১৫ সালের প্রথম দিক থেকে এই কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে গ্রামীণ নারী—স্বাস্থ্য সচেতন গ্রুপের আদলে অপুষ্টির শিকার শিশু ও নারী সমন্বয়ে দল গঠন করা হয়। বর্তমানে ১০টি দলের সমন্বয়ে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সেবা কেন্দ্রের কমীর্বৃন্দ প্রথমে গিয়ে গ্রুপের শিশুদের ওজন ও উচ্চতার মাপ গ্রহণ করে। তারপর সদস্যদের পুষ্টিকর খাবারের উপকারীতা, পুষ্টিকর খাবার কি, পুষ্টিকর খাবার প্রস্তুত প্রণালী, সঠিকভাবে হাত ধোয়ার নিয়ম, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে থাকেন। পাশাপাশি বিভিন্ন শাক—সবজি, ফল—ফলাদির মিশ্রণে পুষ্টিকর খাবার হিসাবে খিঁচুড়ি রান্না করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে সেই পুষ্টিকর খাবার সকল সদস্যের মাঝে বিতরণ করা হয়। ২৫ জন সদস্য সমন্বয়ে দল গঠন করা হলেও এই কার্যক্রমে উপস্থিতি সংখ্যা প্রায় ৫০ জন অতিক্রম করে। সকলের মধ্যেই রান্নাকৃত পুষ্টিকর খাবার সাধ্যমতো বিরতণ করা হয়। উক্ত কার্যক্রমে প্রকল্প সমন্বয়ক ও নির্ধারিত স্বাস্থ্যকমীর্বৃন্দ অংশগ্রহণ করে থাকেন।

পরিবেশ বান্ধব পুষ্টি—বাড়ি তৈরির উদ্যোগ
গ্রামীণ নারী স্বাস্থ্য—সচেতন গ্রুপের সহায়তায় গাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর এবং শ্রীপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৫০টি গ্রামে ৫০০০ গাছের চারা লাগানোর মাধ্যমে ১০০টি পরিবেশ বন্ধব পুষ্টি—বাড়ি তৈরি করার কার্যক্রম শুরু করেছে ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন । পল্লী কর্ম—সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)—এর সহায়তায় সমৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন পরিচালিত এই কার্যক্রম চলমান। কার্যক্রমের আওতায় প্রতিটি বাড়িতে গড়ে ৪০টি গাছের চারা অথবা কলম রোপন করা হবে। বনজ, ফলদ, ঔষধী ও ফুলের চারা এবং মৌসুমী শাক—সবজির বীজ রোপন এই কার্যক্রমের অন্তভুর্ক্ত। ২৬ ডিসেম্বর ’১৮ বিকালে গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের পিঙ্গাইল গ্রামের দীপক চন্দ্র বর্মনের বাড়িতে বিভিন্ন প্রকার ২০টি গাছের চারা—কলম লাগিয়ে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন কমিটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান। কার্যক্রমের গতিশীল ধারাবাহিকতাক্রমে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে পাঁচ লক্ষ ফলদ, বনজ, ঔষধী এবং সৌন্দর্যমন্ডিত ফুলগাছ রোপন নিশ্চিত করা হবে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।

মডেল ভিলেজ কার্যক্রম
এপ্রিল ’১৬ থেকে গ্রামীণ নারী—স্বাস্থ্য সচেতন গ্রুপের কার্যক্রম আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে ৫টি বৃহৎ গ্রামে ১০টি গ্রুপ সমন্বয়ে ৫টি মডেল ভিলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১০,০০০ জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এই ৫টি বৃহৎ গ্রামের ৫০% অর্থাৎ ৫,০০০ নারী ও কিশোরী। জরিপে দেখা যায় গড়ে ১০০ জন নারী সাধারণত গর্ভবতী থাকেন। এই ১০০ জন নারীর পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে নিজেদের সচেতন থাকা উচিত এরূপ কিশোরী এবং মেয়ে শিশুর সংখ্যাও কম নয়। ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন মা ও শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়ন কর্মসূচির টেকসই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এই ১০,০০০ জনগোষ্ঠী সমন্বয়ে ৫টি গ্রামকে উদ্ভাবনী প্রকল্প হিসাবে গ্রহণ করেছে।
মডেল ভিলেজ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে :
- কর্মএলাকার ৫টি মডেল গ্রামে সকল নারী—কিশোরী গর্ভবতী হওয়ার পর ক্লিনিক, হাসপাতাল অথবা ব্যক্তিগতভাবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হবেন। সকল গর্ভবতী নারী ক্লিনিক, হাসপাতাল/বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অথবা প্রশিক্ষিত ধাত্রীর মাধ্যমে সন্তান প্রসবের নিশ্চয়তা লাভ করবেন;
- কর্মএলাকার ৫টি মডেল গ্রামে ২০২২ সাল এবং তৎপরবতীর্ নতুন করে পুষ্টিহীন নবযাতক জন্মলাভ করবে না;
- কর্মএলাকার ৫টি মডেল গ্রামে ভূমিষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবযাতকের জন্মনিবন্ধন ও নির্ধারিত সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমন নিশ্চিত করা হবে;
- কর্মএলাকার ৫টি মডেল গ্রামে সকল নারী—পুরুষের বিশুদ্ধ পানি ও সেনিটেশন সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে;
- কর্মএলাকার ৫টি মডেল গ্রামের প্রতি বাড়িতে একটি মডেল সবজি বাগান এবং পাঁচটি করে ঔষধি গাছ বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করা হবে;
- কর্মএলাকার ৫টি মডেল গ্রামে নারীর প্রতি সহিংসতা, ইভটিজিং, স্থানীয় তরুণ—যুবকদের মাদকাসক্তি, বখাটেপনা সহনীয় পর্যায়ে (Zero tolerance) নামিয়ে আনা নিশ্চিত করা হবে;
মডেল ভিলেজ কার্যক্রমের অভিষ্ট লক্ষ্য
কর্মএলাকার ৫টি মডেল গ্রামে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু এবং পুষ্টিহীনতা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা, নারী—পুরুষের সমমর্যাদা সম্পন্ন সম্পর্ক নির্মাণ এবং প্রকল্প এলাকার ৫টি ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবারকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্ম, ব্যক্তি ও সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন হওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করা।
