সম্ভাবনাময় পরীক্ষামূলক ‘কান্না নয় হাসি’ প্রকল্প কার্যক্রম

উপকূলীয় জেলা বরগুনা দেশের ৬৪তম জেলা এবং চর এলাকা। ৬টি উপজেলা সমন্বয়ে গঠিত এ’ জেলার সর্বমোট জনসংখ্যা ১০,৩৮,৬৪৮ জন। আয়তন ১৩৫৯ বর্গকিলোমিটার। দুইটি করে উপজেলার মধ্য দিয়ে একটি করে নদী প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। তিনটি উপজেলার দক্ষিণ সীমানায় বঙ্গোপসাগর। প্রত্যন্ত এবং নদীভাঙ্গন এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক ও সেকেলে ধরনের। মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। অর্থনীতি কৃষি ও সমুদ্র—নদীতে মৎস শিকারের উপর নির্ভরশীল। নদীর ভাঙ্গন, ঝড়—জলোচ্ছ্বাস, বন্যা—খরার নিয়মিত আক্রমনে ক্ষত—বিক্ষত আর্থ—সামাজিক অবস্থা। লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলী জমিতে উৎপাদন হ্রাসের কারণে কৃষি কাজেও ক্রমান্বয়ে উৎসাহ হারাচ্ছে কৃষক। বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত পরিবারে বেকার যুবকের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদকাসক্ত এবং শিশু—কিশোরী, নারীর প্রতি সহিংসতা। সিডর—আইলা আক্রান্ত হওয়ার পর নদী—খালের পানি বৃদ্ধির প্রভাবে বিপুল পরিমান ফসলী জমি অনির্দিষ্টকালের জন্য লোনা পানিতে ডুবে থাকে। নদীর ভাঙ্গনসহ বিবিধ কারণে ভূমি ও বাস্তুভিটাহীনের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার ফলে একদিকে কর্মক্ষম মধ্য বয়সী কৃষক, জেলে, দিনমজুর ও অর্ধশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনিবার্য ফলশ্রম্নতি হিসাবে মাদকাসক্ত বৃদ্ধির পাশাপাশি শিশু, কিশোরী, নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নসহ সকল প্রকার সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীর জীবনে নেমে আসছে ট্রমাটাইজ হওয়াসহ প্রান্তিক পর্যায়ে উপনীত হওয়ার অভিশাপ। প্রতিনিয়ত ভূমি ও বাস্তুভিটাহীনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, একইধারায় বৃদ্ধি পাচ্ছে বেকারত্ব, মাদকাসক্ত, নারী—শিশু নির্যাতন, বাল্যবিয়ে ও অবাঞ্চিত তালাক।

আমাদের নব প্রজন্মের একটি অংশ হতাশার শিকার। আর হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কেউ কেউ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই তারা লেখাপড়ার পার্ট চুকিয়ে অন্ধকার গলির হাতছানিতে সাড়া দিচ্ছে। অন্ধকার গলিতে কখনো আলো আসবে কিনা বিষয়টি উপলব্ধি করার আগেই তারা প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ায়। এসব বিষয়াদি পর্যালোচনা করে পরীক্ষামূলক উদ্ভাবনী প্রকল্প হিসাবে প্রথম দফায় বরগুনা জেলার ডৌয়াতলা ও রামনা ২টি ইউনিয়নে এবং দ্বিতীয় দফায় উক্ত দুইটি ইউনিয়নসহ গৌরীচন্না, বরগুনা সদর এবং বেতাগী বুড়ামজুমদার ইউনিয়নে সরকারি সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা পল্লী কর্ম—সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)’র সহযোগিতায় এলাকার বেকার যুবক, নেশাগ্রস্ত কিশোর—তরুণদের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিয়ে আত্ম—কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সচেতনতা, কাউন্সেলিং এবং সাইকোথেরাপি কার্যক্রম শুরু করা হয়।
পল্লী কর্ম—সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)—এর LIFT কর্মসূচির আওতায় এপ্রিল ২০১৫ থেকে মার্চ ২০১৭ দুই বছর মেয়াদী কার্যক্রম সমাপন শেষে পরবতীর্ দুই বছর অর্থাৎ মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।

 

 

মানসিক স্বাস্থ্য ক্যাম্প ও গণসচেতনতা কর্মশালা

 সেলাই মেশিন বিতরণ

সাফল্য— মানসিক স্বাস্থ্য ক্যাম্প ও গণসচেতনতা কর্মশালা : মানসিক রোগের ধাক্কা সামলে মোঃ মশিউর রহমান এখন জীবনের মূল স্রোতে।

বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা গ্রামের গোলাম মোস্তফা মধু ও মিনারা বেগম দম্পতির ছেলে মোঃ মশিউর রহামান শৈশব থেকে মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এইচএসসি পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে। বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে তিনি ধুমপায়ী হয়ে যান। একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হলে তার সাথে সম্পর্ক হয়। একপর্যায়ে মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে হয়। বিষয়টি মানতে না পেরে মশিউর মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। লেখা—পড়ার জীবন ছেড়ে দিয়ে ভবঘুরে হয়ে যান। দেখতে দেখতে জটিল মানসিক রোগীতে পরিণত হন। তাকে নিয়ে তার বাবা—মা হতাশ হয়ে পড়েন। বাবা—মা তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করান। কিছুদিন সেখানে থাকার পর মশিউরকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। সে কিছুতেই পূর্বের জীবনে ফিরে যেতে পারেনি। তাকে নিয়ে তার বাবা একদম আশা ছেড়ে দিয়েছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে পল্লী কর্ম—সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)—এর সহায়তায় ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন পরিচালিত আত্ম—কর্মসংস্থানমূলক ‘কান্না নয় হাসি’ প্রকল্পে মানসিক স্বাস্থ্য ক্যাম্পের কথা তারা জানতে পারেন। প্রকল্পের কর্মীরাও তার কথা জানতে পারেন। তারা মশিউরের বাবা—মাকে ‘কান্না নয় হাসি’ প্রকল্পের ডৌয়াতলা শাখা অফিসে আসতে বলেন। ২৭ ও ২৮ মার্চ ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত ‘মানসিক স্বাস্থ্য ক্যাম্প ও গণসচেতনতা কর্মশালায়’ মশিউরকে সাইকোথেরাপিস্টরা কাউন্সেলিং করান এবং ডাঃ জিল্লুর রহমান খান তাঁকে চিকিৎসা দান করেন। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের আওতায় ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পিকেএসএফ—এর অর্থায়নে বিনামূল্যে দুই মাসের ঔষধ দেয়া হয়। আর ডাক্তার জিল্লুর রহমানের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপনে রাখা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় মশিউর রহমান এখন সুস্থতার পথে। তার বাবা মা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ফালাফার প্রতি। সম্প্রতি মশিউরের অবস্থা দেখতে প্রকল্প সমন্বয়ক তাদের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি মশিউরের কাছে জানতে চান, তিনি কে? কোত্থেকে এসেছেন। মশিউর তাকে চিনলেন এবং উত্তর দিলেন তিনি ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন থেকে এসেছেন। মনিরুজ্জামানকে দেখে তিনি ভীষণ খুশী হয়েছেন। তার মাকে বললেন চা দিতে, আর তিনি দোকানে গেলন বিস্কুট আনার জন্য। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তিনি এখন অনেকটা সুস্থ। তার বাবা—মা বলেছেন মশিউর এখন আর বেকার বসে থাকতে চায় না, কাজ করতে চায়। মশিউর প্রকল্প সমন্বয়ককে বলেন, ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয় থেকে আমাকে কোনো কাজের ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখবেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, তিনি যেহেতু আগে টিউশনি করতেন, তাই তাকে ডৌয়াতলাস্থ কোন একটা কোচিং সেন্টারে যুক্ত করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়। ইতোমধ্যে মশিউর তাদের বসত ঘরের বারান্দায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুইটি গ্রুপকে পড়াতে শুরু করেছেন।

সাফল্য— নারী গ্রুপ পোশাক তৈরী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম : ক্রান্তিকালীন সময় পেরিয়ে মাহফুজা বেগম এগিয়ে চলেছেন আলোর দিশারী হয়ে

বরগুনা জেলার বরগুনা সদর উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের মোঃ জয়নাল আবেদিন ও সাহিদা বেগম দম্পতির তিন কন্যার মধ্যে ছোট কন্যা মাহাফুজা বেগম । অসহায় মাহফুজাকে এক ছেলেসহ তার স্বামী ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। নিরুপায় হয়ে ছোট শিশুকে নিয়ে বাবা মায়ের কাছে চলে আসে সে। সহায় সম্বলহীন বৃদ্ধ বাবা কাজ—কর্ম করতে পারেনা বিধায় সংসারের হাল ধরতে হয় মাহফুজাকেই। বড় বোনদের সহোযোগিতায় সে একটি গাভী এবং কিছু হাঁস—মুরগি কিনে নিজের বসত বাড়িতেই ছোট্ট একটা খামার করে। ধীরে ধীরে ছেলেটি বড় হতে থাকে। তার লেখা পড়ার খরচ বহন করে সংসার সামলানো তার জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। সংসারের হাল ধরার কিছুদিন পরই বাবার মৃত্যুতে তার অসহায়ত্ব আরো বেড়ে যায়।
সংসারের হাল কীভাবে ফেরাবেন চিন্তামগ্ন হয় মাহফুজা। মনস্ত করলেন সেলাই কাজ শিখে নিজের ঘরের সকল কাজ শেষ করে প্রচলিত মজুরির বিনিময়ে প্রতিবেশীদের পোশাক তৈরির কাজ করবেন। তার মা এবং বোনদের সাথে পরামর্শ করলেন কীভাবে কাজ শেখা যায় । তার বোন তাকে পাঠালেন পল্লী কর্ম—সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)—এর সহায়তায় ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন পরিচালিত আত্ম—কর্মসংস্থানমূলক ‘কান্না নয় হাসি’ প্রকল্পে। প্রকল্প কর্মকর্তা—কমীর্বৃন্দ তার সব কথা শুনে আবেদন ফরম ও প্রোফাইল পূরণ করে সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের অন্তভুর্ক্ত করে নেয়। মাহফুজা নিয়মিত নারী গ্রুপ পোশাক তৈরী প্রশিক্ষণে উপস্থিত থেকে ধৈর্য্য সহকারে মনোযোগ দিয়ে রুটিন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নিতে থাকে এবং প্রতিটা মৌলিক ক্লাশ ও সাপ্তাহিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পনের দিন শেখার পরপরই সে নিজের উদ্যোগে বাজার থেকে একটি সেলাই মেশিন ভাড়া করে। প্রশিক্ষণে প্রতিদিন যা শেখে তা বাড়িতে অনুশীলন করে অফিসে এসে আবার তার কাজ করে দেখায়। সবোর্পরি দুই মাস কোর্সের নারী গ্রুপ পোশাক তৈরী প্রশিক্ষণের সমাপণী পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে মাহফুজা উত্তীর্ণ হন। ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পিকেএসএফ সহায়তাপুষ্ট কার্যক্রমের আওতায় তার কাজের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে বিনামূল্যে একটি সেলাই মেশিন দেয়া হয়। প্রাপ্ত সেলাই মেশিন দিয়ে বর্তমানে মাহফুজা নিজের কাজ ছাড়াও ন্যায্য মূল্যের ভিত্তিতে প্রতিবেশিদের পোশাক তৈরির কাজ করে বাড়তি উপার্জন করে ছেলের লেখাপড়ার খরচ এবং বৃদ্ধ মায়ের সহোযোগিতা করে সংসার চালাচ্ছেন নিজ উদ্যোগে। ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। পোশাক তৈরির চাহিদার ভিত্তিতে অতিসম্প্রতি মাহফুজা তার ঘরের সাথে একটি দোকান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যাতে করে নিজের সেলাই মেশিন দিয়ে অর্ডারি কাজ করার পাশাপাশি বোনদের সহোযোগিতায় ঢাকা থেকে তৈরি পোশাক এনে পাইকারি মূল্যে নিজ দোকানে বিক্রি করতে পারেন। সেলাই কাজ করে মাহফুজা এখন স্বাবলম্বী। মাহফুজা অন্ধকার দিশাহীন জীবনের ঘোর কাটিয়ে আলোর পথে উত্তরণ ঘটানো ও তার জীবন মানোন্নয়নের জন্য ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন এবং পিকেএসএফ—এর সকল কর্মকর্তা—কমীর্দের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

সাফল্য— ইলেকট্রিক ওয়ারিং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম : মোঃ রেজাউল ইসলামের জীবনে গতি এনেছে

বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের গোলাঘাটা গ্রামের মোঃ জামাল আকন ও মোসাঃ রীনা বেগমের একমাত্র পুত্র রেজাউল ইসলাম পাভেজ। ছোট বেলায় রেজাউল ইসলামকে তার মায়ের কাছে রেখে পিতা অন্যত্র বিয়ে করে সংসার পাতেন। অসহায় মা রীনা বেগম রেজাউল ইসলামকে নিয়ে বাবার বাড়িতে অতি কষ্টে দিনযাপন করে বাবা—মায়ের সহযোগিতায় ছেলেকে বড় করে। রেজাউল ইসলাম শৈশব থেকে জীবনের ঘাত—প্রতিঘাত সয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে এসএসসি পাশ করে। অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি হতে না পারার কারণে মাঝ পথেই তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। হতাশাগ্রস্থ বেকার জীবনে বখাটে ব›ধুদের পাল্লায় পড়ে স্কুল পড়–য়া একটি মেয়েকে প্রেমের ফাঁদ ফেলে বিয়ে করে। তার বড় মামার সহযোগিতায় ডৌয়াতলা বাজারে বসে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শিখে রেজাউল। এতে সামান্য যা উপর্জন হয় তাতে মা এবং বউয়ের ভরণ—পোষন কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না, ফলে সংসারে অশান্তি লেগেই থাকতো। পল্লী কর্ম—সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)—এর সহায়তায় ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন পরিচালিত আত্ম—কর্মসংস্থানমূলক ‘কান্না নয় হাসি’ প্রকল্পের যুবক—যুবতী সচেতনতা কর্মশালায় তাকে আহবান করা হয় এবং সে মনোযোগ সহকারে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে। কর্মশালা শেষে সে ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা—কমীর্দের সাথে আলাপ করে এখানে কোন কাজের সুযোগ আছে কিনা জানতে চায়। আমরা তার সঙ্গে আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি। আমাদের কার্যক্রম শুনে সে মুগ্ধ হয় এবং ইলেকট্রিক ওয়ারিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নিয়ম মোতাবেক তার আবেদন ও প্রোফাইল ফরম পূরণ করা হয়। বাসায় গিয়ে তার মায়ের সাথে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলে তার মা রিনা বেগমও সেলাই প্রশিক্ষণের আবেদন ফরম পূরণ করেন এবং সেলাই প্রশিক্ষণ নেন। আমরা যখন ৪ জনের ইলেকট্রিক ওয়ারিং প্রশিক্ষণ ব্যাচ শুরু করি তখন সে ইলেট্রিশিয়ান সফিকুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের নির্ধারিত রুটিন মেনে ধাপ অনুযায়ী কাজ শিখে নেয়। বাংলাদেশ সরকারের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ননের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুতায়ন হওয়ায় ইলেকট্রনিক দ্রব্যসামগ্রি ও ইলেকট্রিক ওয়ারিংয়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রেজাউল একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ী লোন হিসাবে ২,০০,০০০/— (দুই লক্ষ) টাকা উত্তোলন করে। সে টাকা দিয়ে দোকানে ইলেকট্রিক মালামাল ক্রয় করে ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করে। রেজাউল ইসলাম দিনে ইলেকট্রিক ওয়ারিংয়ের কাজ ও মালামাল বিক্রি করে এবং রাতে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করে ধীরে ধীরে আর্থিক সাবলম্বিতার দিকে যাচ্ছে। গ্রামে দক্ষতার সাথে ইলেকট্রিক ওয়ারিংয়ের কাজ সুনামের সাথে করায় কাজের চাহিদা আরো বেড়ে গেছে। তার মা রিনা বেগম ঘরে বসে সেলাইয়ের কাজ করে সংসারে বাড়তি আয়ের উৎস সংযুক্ত করেছে। মা ছেলের ঘরে বাইরে আয়ে তাদের সংসার অনেক ভালভাবে চলছে। রেজাউল ইসলাম ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন এবং পিকেএসএফ—এর সকলকে কৃতজ্ঞতা জানান তার জীবনের গতি আনার জন্য। তিনি আরো বলেন, ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন না হলে আজ আমি আলোর মুখ দেখতাম না।

প্রশিক্ষণ গ্রহণ পরবতীর্ সফলতার গল্প : মাছ চাষ ও খামার কার্যক্রম

বর্ণা রায় অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ৩৫ বছরের এক পুরুষ কতৃর্ক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। মা—বাবা সম্মান রক্ষার্থে তাকে চট্টগ্রামে মেজ বোনের কাছে পাঠায়। সেখানে প্রেমের ফাঁদে ফেলে জলিল নামের এক ছেলে বর্ণাকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে বিবাহের নাম করে আটকিয়ে রাখে। অভিবাবক পক্ষ মামলা করলে জলিল মেয়েটিকে নিয়ে আদলতে হাজির হয়। মহামান্য আদলত তাকে কিশোরী সংশোধনাগারে পাঠালে ছয় মাস জেলে থাকার পর সেখান থেকে মেয়েটি মা—বাবার সাথে নিজ গ্রামে চলে আসে। এই মেয়েটি যখন ঘরে ফিরে আসে তখন পরিবারের মা—বাবা, ভাই—বোন সবাই তাকে নির্যাতন করতে থাকে। আমরা বিষয়টি জানতে পেরে বর্ণার পরিবারের সাথে কথা বলে তাদের ভ্রান্তির অবসান ঘটাই এবং মেয়েটি যাতে পড়াশুনা করে এগিয়ে যেতে পারে এই দিকটি বিবেচনা করে ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন পরিচালিত ‘আলোর দিশারী’ ছাত্রী ও কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে সে আমাদের বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মশালায় অংশগ্রহন করে মানসিক আস্থা ফিরে পায়। বর্ণা ‘কান্না নয় হাসি’ পরিচালিত মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ নিয়ে পারিবারিকভাবে মাছ চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রশিক্ষণ নিয়ে বাস্তবে তা রূপায়িত করেছে দুইটি মাছের ঘের করার মাধ্যমে। বর্তমানে মাছের ঘের দেখাশুনায় তার বাবা ও বড় ভাই সহোযোগিতা করে। পাশাপাশি বর্ণা তার পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে সমান তালে। এ’বছর সে জে.এস.সি. পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে।

প্রশিক্ষণ গ্রহণ পরবতীর্ সফলতার গল্প : মাছ চাষ ও খামার কার্যক্রম

মোঃ রিপন খান একজন অসহায় অসুস্থ বাবা ও মানসিক ভারসম্যহীন মায়ের সন্তান। মাকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সে সর্বশান্ত হয়ে পড়ে। অর্থের অভাবে অসুস্থ বাবা—মায়ের ঔষধের ব্যবস্থা করতে পারত না। সে বিবাহিত এবং ব্যক্তিগত জীবনে তার অষ্টম শ্রেনীতে পড়ুয়া একটি ছেলে ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়–য়া একটি মেয়ে রয়েছে। যাদের খরচ লেখাপড়া ও সংসারের খরচসহ বাবা মায়ের ঔষধের ব্যবস্থা করতে করতে প্রাণ ওষ্ঠাগত ঠিক সেই মূহূর্তে ‘কান্না নয় হাসি’ ১৮/০৮/১৬ তারিখে প্রথম ব্যাচে পরিচালিত মৎস্য চাষ ও খামার কার্যক্রম প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তার মাছের ঘের করার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করেন। কিছু দিন আগে মাছ বিক্রি করে ফার্মেসীর বকেয়া টাকা পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে তার বাবা সুস্থ কিন্তু তার মা এখনো পুরোপুরি সুস্থ না। তাকে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে নিয়মিতভাবে। রিপন এখন মাছের ঘের দেখাশুনার ভার স্ত্রী ও ছেলের উপর ছেড়ে ঢাকায় গিয়েছেন দিনমজুরের কাজ করতে।

প্রশিক্ষণ গ্রহণ পরবতীর্ সফলতার গল্প : পোশাক তৈরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম

হাজেরা আক্তার মনি এস.এস.সি পড়া অবস্থায় জোর করে বাবা—মা চট্টগ্রামে চাকুরি করা একটি ছেলের সাথে বিয়ে দেয়। কথা ছিল বিয়ের পরে তাকে পড়াশুনা করাবে কিন্তু তারা বিয়ের পড় পড়াবেনা বলে জানায়। একটি মেয়ে সন্তান হয়ে মনির স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়। মনির স্বামী অন্য একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় মনির উপর অত্যাচার। বিভিন্ন অজুহাতে মারধর করে বাবার বাড়িতে পাঠানোর জন্য নানান বাহানা করত তার স্বামী। মণি আক্তার অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে বাবার বাড়িতে আসে এবং এক বছর পর ডিভোর্স লেটার পাটিয়ে দেয়। নিরুপায় মনি ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করলে তাকে সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হয় এবং তার পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। অতঃপর ‘কান্না নয় হাসি’ পরিচালিত দ্বিতীয় ব্যাচে নারী—কিশোরী গ্র“প পোশাক তৈরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মনি। বর্তমানে একটি সেলাই মেশিন কিনে মনি প্রতিবেশীদের পোশাক তৈরি করে অর্থ উপার্জন করা শুরু করেছে। মেয়েকে কেজি স্কুলে ভর্তি করিয়েছে, পাশাপাশি নিজে বরগুনা সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স বিভাগের ১ম বর্ষে পড়াশুনা করছে।

প্রশিক্ষণ গ্রহণ পরবতীর্ সফলতার গল্প : পোশাক তৈরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম

শিল্পী অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বাবা মা বিবাহ দেয়। শিল্পীর স্বামীর পরিবার ছিল জুয়ার সাথে জড়িত। স্বামী সুমন মটরসাইকেল ড্রাইভার এবং মদ—গাঁজাসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। বিয়ের পর থেকেই সুমন শিল্পীকে নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতে থাকে। এমনকি নেশাগ্রস্থ হয়ে রাতে স্ত্রীর ঘরে অন্য পুরুষ উঠিয়ে দিত। শিল্পী এই সব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়ি চলে আসে। শিল্পী বাবা—মাকে তার নির্যাতনের নির্মম কাহিনী বুঝিয়ে বলতে সক্ষম হলে বাবা—মা তাকে শ^শুরবাড়ি না পাঠিয়ে ডিভোর্স করিয়ে নেয়। মানসিকভাবে প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ে শিল্পী। হতাশ হয়ে ‘কান্না নয় হাসি’ প্রকল্পের কমীর্দের সাথে যোগাযোগ করলে তাকে সেলাই প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। স্বামী পরিত্যাক্তা শিল্পী রানী প্রথম ব্যাচে নারী—কিশোরী গ্র“প পোশাক তৈরি প্রশিক্ষণ নিয়ে গার্মেন্সে গিয়ে চাকুরি করত। বর্তমানে সে আবার বাড়ি ফিরে এসে নিজ উদ্যোগে সেলাই মেশিন কিনে নিজেই ছোট পরিসরে দর্জির কাজ করছে। সুযোগ পেলে ধীরে ধীরে সে বড় করে দার্জির দোকান করবে বলে আমাদেরকে জানায় শিল্পী।

প্রশিক্ষণ গ্রহণ পরবতীর্ সফলতার গল্প : মাচা পদ্ধতিতে ছাগল/ভেড়া পালন

এলাচী বেগম বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার উত্তর রামনা গ্রামের মো: শাহ আলম—এর স্ত্রী। স্বামী শাহ আলম রোগাক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। পরিবারের কোনো কাজ করতে পারে না এমনকি এখন আয় করার ক্ষমতাও হারিয়েছে। সামান্য জমি তাদের একমাত্র আয়ের উৎস। তাদের একটি মাত্র মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর স্বামীর সাথে বসবাস তার। এখন তাদেরকে দেখাশুনা করার জন্য কেউ নেই। বয়স বেশি হওয়ার কারনে তারা মানুষের বাড়িতে কাজও করতে পারছিলনা, এমনকি ওষুধ পর্যন্ত কিনে খেতে পারছিলেন না। এলাচী বেগম কারো কাছে হাত না পেতে নিজেই কিছু করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন এবং যোগাযোগ করেন ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন। আমরা তাকে প্রকল্প —মাচা পদ্ধতিতে ছাগল/ভেড়া পালন প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেই। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বর্তমানে ছাগলের খামার গড়ে তুলেছে এলাচী বেগম। বর্তমানে তার খামারে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের তিনটি ছাগল রয়েছে।

প্রশিক্ষণ গ্রহণ পরবতীর্ সফলতার গল্প : মাচা পদ্ধতিতে ছাগল/ভেড়া পালন

সাহেরা বেগম বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার উত্তর রামনা গ্রামের মো: ইউনুচ আলীর স্ত্রী। ব্যক্তিগত জীবনে স্বামী দ্বারা নির্যাতিত একজন নারী। তার স্বামী তাকে মোটেই সহ্য করতে পারত না। নানাবিধ নির্যাতন করতো তার উপর। সাহেরা সিদ্ধান্ত নেয় নিজেই আয় করে স্বাবলম্বী হবে। কারো অনুগ্রহে দিনাতিপাত করবে না সংসারের বোঝা হবে না। ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনে এসে সাহেরা জানতে চায় কীভাবে আমি আয় করে নিজে স্বাবলম্বী হতে পারি। তখন তাকে ‘কান্না নয় হাসি’ প্রকল্পের মাচা পদ্ধতিতে ছাগল/ভেড়া পালন প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। কান্না নয় হাসি প্রকল্পের তৃতীয় ব্যাচে মাচা পদ্ধতিতে ছাগল/ভেড়া পালন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ধীরে ধীরে সে স্বল্প পরিসরে গড়ে তোলে খামার। বর্তমানে তার খামারে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের চারটি ছাগল রয়েছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বরগুনা জেলার প্রত্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ২২ জুলাই ’১৮, রোববার, পাথরঘাটা উপজেলার লেমুয়া সৈয়দ ফজলুল হক কলেজ—বিশ্ববিদ্যালয়ে ও কলেজ—বিশ্ববিদ্যালয়, লেমুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডা. ফিরোজা বেগম বালিকা বিদ্যালয় ও লেমুয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক—শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি এবং সমাজ সেবকবৃন্দ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন :—

  • আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর চেয়ারম্যান বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ড. সেলিনা হোসেন
  • সভার সভাপতি কলেজ—বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জিয়াউল করিম
  • সভার বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএন আশরাফ উল্যাহ তাহের
  • বিশেষ অতিথি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জমাদার, জেলা পরিষদ সদস্য
  • বিশেষ অতিথি মোঃ মিজানুর রহমার রূপক, চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ
  • আলোচক ফালাফা. প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন খান
  • আলোচক অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম, হলতা ডৌয়াতলা ওয়াজেদ আলী খান ডিগ্রি কলেজ
  • আলোচক প্রভাষক পবিত্র মিত্র, গণিত বিভাগ— হলতা ডৌয়াতলা ওয়াজেদ আলী খান ডিগ্রি কলেজ, ডৌয়াতলা, বামনা, বরগুনা,
  • শিক্ষার্থী — সাথী, একাদশ শ্রেণী, সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ
  • হলরুমের উপস্থিত একাংশ

শিক্ষা—সংস্কৃতি কর্মসূচি
চলমান কার্যক্রম: শিক্ষা

১) শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম ঃ ১। সূচনা ঃ— শিশু বিকাশ ও প্রাক্ প্রাথমিক শিক্ষা — নদী উপকূলে বসবাসকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের মেধা বিকাশে বামনা,পাথরঘাটা,বেতাগী, তালতলী ও বরগুনা সদরসহ ৫টি উপজেলায় ৬টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র পরিচালনা। প্রত্যক্ষ উপকারভোগী ১৪০০ জন, পরোক্ষ ৫৫০০ জন।
২। সহ—শিক্ষা : এস.এস.সি. ও এইচ.এস.সি.বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষা শেষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য তিন মাস ব্যাপী ইংরেজী বলা—লেখা, সাধারণ জ্ঞান এবং কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা। প্রতি বছর উপকারভোগী ১০০ জন।
৩। শিক্ষা বৃত্তি : মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে নিয়মিত পড়ূয়া গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ২ বছর মেয়াদী এবং ডিগ্রী শ্রেণী ও বিশেষায়িত শিক্ষারত শিক্ষার্থীদের তিন বছর মেয়াদী শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা।

চলমান কার্যক্রমঃ শিক্ষা

৪। শ্রেষ্ঠ শিক্ষাথী প্রতিযোগিতাঃ
প্রথম শ্রেণী থেকে ডিগ্রী পড়ূয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনটি গ্রুপে (প্রাথমিক, মাধ্যমিক ,কলেজ) ৫টি বিষয়ে ২৫০ নম্বরের লিখিত ও ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা আয়োজন করে বছরে তিনজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীকে ‘পদক’ এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রতিটি শ্রেণীতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী মোট ৩৬ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
প্রতি বছর প্রত্যক্ষ উপকারভোগীর সংখ্যা ৩০০ জন।

৫। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সহায়তাঃ দেশের প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের মান উন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রনয়ণে সহায়তা দান করা । এ বিষয়ে হলতা ডৌয়াতলা ওয়াজেদ আলী খান ডিগ্রী কলেজের পাঠদানের মান উন্নয়ন এবং অবকাঠামো উন্নয়নকল্পে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষের সংগে ১০ বছর মেয়াদী দ্বিপাক্ষিক চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চলমান কার্যক্রমের আওতায় কলেজ প্রাঙ্গণে কর্মজীবী নারী ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় দ্বিতল বিশিষ্ট ৪০ জনের থাকার উপযোগী হোষ্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকার কিশোর—কিশোরী, যুবক—যুবা এবং সাধারণ মানুষের সংস্কৃতি বোধ শানিত রাখার লক্ষ্যে একই প্রাঙ্গণে একটি দৃষ্টিনন্দন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

সংস্কৃতি শিক্ষা কার্যক্রম

‘আমার অধিকার: জানতে চাই, বুঝতে চাই’ শিরোনামে ২০০৪ সালের আগষ্ট মাসে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় উপকূলীয় জেলা বরগুনার ৫টি উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন/পৌরসভার ৩৭৮ টি গ্রামে নারী শিশুর মানবাধিকার, নারী ও শিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা প্রতিরোধ ও জেন্ডার বৈষম্য নিরসনে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করা হয়। ২০২১ সালের শেষভাগে ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন বরগুনা জেলাকে নারী ও শিশু নির্যাতনমুক্ত এলাকা ঘোষণা করতে বদ্ধপরিকর। আর এ লক্ষ্য অর্জণে গঠনতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের অংগ সংগঠন হিসাবে গ্রাম,ইউনিয়ন/পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মোট ৪ টি স্তরে ৪২৭ টি সচেতন নাগরিক পরিষদ ( সনাপ ) কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যন্ত এলাকার ১০১ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে সচেতন শিক্ষক — শিক্ষার্থী পরিষদ স্ব স্ব এলাকায় নারী — কিশোরী — তরুণী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছে। সনাপের স্থানীয় কমিটি নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সদা জাগ্রত প্রহরী হিসাবে কাজ করছে।

সচেতন নাগরিক পরিষদ ও বিভিন্ন গ্রুপের বিবরণ

সনাপ কমিটির বিবরণঃ
জেলা কমিটির সদস্য সংখ্যা = ৭১ জন, প্রতিটি উপজেলা কমিটির সদস্য সংখ্যা =৫১ জন, প্রতিটি ইউনিয়ন কমিটির সদস্য সংখ্যা=২১ জন এবং প্রতিটি গ্রাম কমিটির সদস্য সংখ্যা =১৫ জন।
জেলা কমিটি ১টি, সদস্য= ১ * ৭১ = ৭১ জন
উপজেলা কমিটি ৬টি, = ৬ * ৫১ = ৩০৬ জন
ইউনিয়ন পৌরসভা কমিটি ৪২ টি = ৪২ * ২১ = ৮৮২ জন
গ্রাম কমিটি ৩৭৮ টি = ৩৭৮ * ১৫ = ৫৬৭০ জন
———————————————————————
৪২৭ টি

বিভিন্ন গ্রুপের বিবরণঃ
ছাত্র ছাত্রী গ্রুপ = ৭৭ টি
এন এন সি গ্রুপ = ৪৮ টি
আইনী সহায়তা গ্রুপ = ১ টি
শিক্ষা গ্রুপ = ৯৫ টি
পেশাজীবি গ্রুপ = ৫ টি
প্রশাসনিক গ্রুপ = ৫ টি
সাংবাদিক গ্রুপ = ১ টি
এর মধ্যে বালক গ্রুপ ৬৬ টি, বালিকা গ্রুপ ১১ টি , সম্মিলিত গ্রুপ ৫৮১ টি। মোট গ্রুপ মেম্বর ৯২২৪ জন নারী ৪০৮৫ জন , পুরুষ ৫১৩৯ জন ।
গ্রুপের ধরণঃ প্রাথমিক গ্রুপ ৪৯১ টি, সাহায্যকারী গ্রুপ ১৪৫ টি ,রেজিষ্টার্ড গ্রুপ ২২ টি ।

কার্যক্রম : কর্ম

১। আত্ম কর্মসংস্থান : উদ্যোগঃ প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র ভূ— সম্পত্তির স্বত্বাধিকারী নারী পূরুষ পরিচালিত ‘ কৃষি বৈচিত্রকরণ ও উন্নয়ন খামার’ – নদীর ভাঙ্গন কবলিত কৃষি নির্ভর বরগুনা জেলার বামনা, পাথরঘাটা, বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলায় নারী ও পূরুষ সমন্বয়ে ২০০৮ সালে ৫ টি কৃষি বৈচিত্রকরণ ও উন্নয়ন খামার গড়ে তোলা হয়। প্রতিটি খামারে ২০ একর জমি এবং ১০ জন নারী ও ১০ জন পুরুষ কৃষক / কৃষাণী রয়েছেন। কৃষি বৈচিত্রকরণ বলতে এক ফসলী জমিকে তিন ফসলী জমিতে রুপান্তর করে কৃষি জমির উৎপাদন বৃদ্ধি করাকে বুঝানো হয়েছে। প্রত্যক্ষ উপকারভোগী ৪০০ জন নারী, পরোক্ষ উপকারভোগী ১৬০০ জন নারী ও পুরুষ ।

২। বসতিঃ ২০০৭ সালে সংঘটিত সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুভিটাহীন পরিবারগুলোর পূনবার্সনের জন্য ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৫ টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ১০ টি বসতী পল্লী নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি পল্লীতে ১০ টি ঘর ,একটি গভীর নলকূপ ও ৪ করে টি শৌচাগার স্থাপন করে ১০ টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পূনর্বাসন করা হয়েছে। এ ছাড়া ত্রান ও পূনর্বাসনের আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ১৭৭৫১ জন। (অধিকাংশই নারী)।

৩। আশ্রয়ঃ সিডর পরবর্তীকালে বিদেশী সাহায্য সংস্থার সহযোগিতায় ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন বামনা, পাথরঘাটা ও বরগুনা সদর উপজেলায় তিনটি ‘ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র’ নির্মাণ করে। এ সব আশ্রয়কেন্দ্র সমূহ সনাপের স্থানীয় কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার করার পাশাপাশি কৃষি বৈচিত্রকরণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।