ফাউন্ডেশনের শিক্ষা—সংস্কৃতি কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে নিম্নবর্ণিত ৪টি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

‘সূচনা’ : শিশু বিকাশ ও প্রাক প্রাথমিক কেন্দ্র

২০০৭ সাল থেকে বরগুনা জেলার নদী উপকূল এলাকার প্রান্তিক, ভূমিহীন ও জেলে পরিবারের শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যে ৫টি শিশু বিকাশ ও প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৫ সালে স্থানীয় অভিভাবক ও হিতৈষীদের দাবীতে তালতলী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম চন্দনতলায় নুতন একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে ৬টিতে উন্নীত করা হয়। প্রতিটি শিশু বিকাশ ও প্রাক প্রাথমিকে গড়ে যথাক্রমে ২০ জন করে মোট ৪০ জন ছেলে ও মেয়ে শিশু এবং ৬টি কেন্দ্রে সর্বমোট ২৪০ জন শিশু খেলাধূলা এবং প্রারম্ভিক শিক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের কেন্দ্রগুলো থেকে স্বাস্থ্যবান ও ধীমান শিশু এবং ভবিষ্যতের সুস্থ সবল নাগরিক তৈরী করার লক্ষ্যে পুষ্টিহীন এসব শিশুদের সপ্তাহে ছয় দিন নাস্তা এবং দুই দিন নাস্তার সঙ্গে একটি করে সেদ্ধ ডিম খাওয়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
আমাদের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণী থেকে প্রতিবছর গড়ে ১০০ শিশু নিকটস্থ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়/ রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হচ্ছে। আমাদের কেন্দ্র থেকে যেসব শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এদের মধ্যে ঝরে পড়া শিশুর হার অতি সামান্য।

শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম (ইংরেজি বলা ও লেখা, সাধারণ জ্ঞান এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স)

বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলায় ফাউন্ডেশনের শিক্ষা—সংস্কৃতি কমপ্লেক্সকে কেন্দ্রবিন্দু করে ঐ এলাকার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থী ৩০ জন করে মোট ৬০ জন শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্যে তিন মাসব্যাপী ইংরেজী বলা ও লেখা এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করা শুরু হয়। এস. এস. সি. ও এইচ. এস. সি. বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষা শেষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিন মাসব্যাপী ইংরেজি বলা ও লেখা, সাধারণ জ্ঞান এবং কম্পিউটার কোর্সের সঙ্গে তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কোর্স যুক্ত করা হয়। প্রতি বছর এই প্রশিক্ষণ কোর্স থেকে ৩০ জন ছাত্রী এবং ৩০ জন ছাত্র সমন্বয়ে মোট ৬০ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা গ্রহণপূর্বক উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের সনদপত্র প্রদান করা হয়। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কৃতকার্যের সঙ্গে এ’ প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেছে ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে প্রায় এক—চতুর্থাংশ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেছে/করছে।

শিক্ষার্থী, যার মধ্যে প্রায় এক—চতুর্থাংশ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেছে/করছে। এক—চতুর্থাংশ সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত আছে। এক—চতুর্থাংশ দরিদ্র পিতা—মাতার সংসারের হাল ধরেছে। বাকি এক—চতুর্থাংশ আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখছে না। আমাদের বিশ্বাস যোগাযোগ প্রযুক্তির আধুনিকায়ন ও ডিজিটাইলেজন প্রক্রিয়ায় সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ হিসেবে এ’ কার্যক্রম ব্যাপক অবদান রাখছে।

 

শিক্ষাবৃত্তি

শিক্ষা—সংস্কৃতি কেন্দ্রের নিকটস্থ ডৌয়াতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ওয়াজেদ আলী খান ডিগ্রি কলেজ, সরকারী বি.এম. কলেজ, ঢাকা কলেজ, ইডেন বিশ^বিদ্যালয় কলেজ, বরিশাল মেডিকেল কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত নিয়মিত, মেধাবী ও গরীব শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে নিয়মিতভাবে। বছরে চারটি প্রান্তিকে এ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। প্রতি বছর ১.০০ লক্ষ টাকার অধিক শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়।

সেরা শিক্ষার্থী নির্বাচন প্রতিযোগিতা

বরগুনা জেলার বামনা, পাথরঘাটা এবং সংলগ্ন পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা আয়োজনের মাধ্যমে প্রতি বছরের সেরা শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে যথাক্রমে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক স্তরে ১ জন, মাধ্যমিক স্তরে ১ জন এবং কলেজ পর্যায়ের ১ জন মোট ৩ জনকে বছরের সেরা শিক্ষার্থী এবং প্রত্যেক শ্রেণী থেকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ১ম, ২য়, ৩য় স্থান অধিকারী সর্বমোট ৩৬ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের শেষভাগে প্রতিযোগিতার লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে প্রাইমারী, মাধ্যমিক, কলেজ থেকে বহুসংখক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। ৩ জন শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী ৩৬ জন ছেলে—মেয়ের নাম পরীক্ষা শেষে একই দিন ঘোষণা করা হয়। শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে প্রতিযোগিতা পরিচালনা করার ফলে গত ৭ বছরে পরীক্ষা পরিচালনা ও ফলাফল নির্ধারণে অদ্যাবধি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।

সেরা শিক্ষার্থী নির্বাচন প্রতিযোগিতা

প্রতিযোগিতা আয়োজন করা থেকে আমাদের অর্জন হচ্ছে :—

  • অংশগ্রহণকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও শিক্ষার্থী সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
  • প্রতিযোগী শিক্ষার্থীরা শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।
  • ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন পরিকল্পিত এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার মানসিকতা তৈরী করতে সহায়তা করতে পারছি।

৩১৮টির অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ১,৩৪৩ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ২৭৭ জনকে সেরা শিক্ষার্থী নির্বাচন করে সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জ মেডেলসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসম্বলিত বই দ্বারা পুরস্কৃত করা হয়েছে।